বন্ধুরা, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। এ অনুষ্ঠানে আপনারা বিভিন্ন ছোট গল্প, আধুনিক ও প্রাচীন কবিতা, সাহিত্যিকের জীবনী ও তাদের কর্ম, উপন্যাস, নাটক- এক কথায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে শুরু করা যাক, আজকের 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক অনুষ্ঠান।
প্রথমে একজন শ্রোতার চিঠি শুনবো।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ইন্টারন্যাশনাল রেডিও লিশেনার্স ক্লাবের দেবাশীষ গোপ লিখেছেন,
সুপ্রিয় জিনিয়া দিদি ও তৌহিদ ভাই,
নি হাও। ২০১৫ সাল শেষ হতে চললো। ইংরেজি নতুন বর্ষ আসন্ন।
পুরাতন সব ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে, নতুনকে বরণ করে, সুস্থ চিন্তায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে নতুন বছরে পদার্পণ ঘটুক। 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠান প্রতিনিয়ত সাহিত্যের রস ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে তারুণ্যের ন্যায় ছুটে চলুক নতুন বছরে এই প্রত্যাশা রাখি।
২২শে ডিসেম্বর সাংস্কৃতিক খবর, হংকংয়ে অনুষ্ঠিত এশীয় সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ফোরাম প্রবন্ধ, স্মরণীয় বরণীয় যাঁরা অনুষ্ঠানে কুদরতি খোদার জীবনী, শেষে গান ভালা লাগল।
আগামীতে প্রাচীন কবিদের কথা শুনতে আগ্রহী।
সিয়ে সিয়ে। চাই চিয়েন।
জবাব: বন্ধু দেবাশিষ গোপ, নববর্ষের শুরুতে আপনার চিঠির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাকে জানাচ্ছি নতুন বছরের শুভেচ্ছা.. হ্যাপি নিউ ইয়ার।
বন্ধুরা, এবার শুনুন মিশর থেকে চীনের 'নিং সিয়ায় আগত মানুষ' সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন।
যখন আফ্রিকার দেশ মিশরের মানুষ আহমেদ সাঈদ প্রথমবার চীনে আসেন তখন তার মাত্র ৩ মাসের চাকরির চুক্তি হয়। কিন্তু তারপর তিনি পাঁচ বছর ধরে চীনে রয়েছেন। তার দৃষ্টিতে চীনের নিং সিয়া দ্বিতীয় জন্মস্থানে পরিণত হয়েছে।
"হ্যাঁ, যদি তার ইংরেজি ভাষা ভালো হয়, তাহলে আমার কাছে তার জন্য উপযুক্ত একটি কাজ রয়েছে।...তার আরবি ভাষা খুবই ভাল।..."
চীনের নিং সিয়া হু জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইন ছুয়ান শহরের সিন তুং ছিয়াং স্ট্রিটের একটি পাঁচ তলা ভবনের অফিসে, মিশরের আহমেদ সাঈদ অনর্গল চীনা ভাষায় স্থানীয় এক প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদক লিউ ই ইউয়েই'র সঙ্গে আলোচনা করছেন। লিউ ই ইউয়েই বলেন,
"সাঈদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে যোগাযোগ রয়েছে। আমার মনে হয় চীন-আরব সংস্কৃতির মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছেন তিনি।"
৩২ বছর বয়স্ক সাঈদ ২০০৫ সালে মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনা ভাষা শেখা প্রথম ব্যাচের স্নাতক শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন তিনি।
"বিশ্বের লোকসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ হলো চীনা মানুষ। কিন্তু আমি চীন সম্পর্কে কিছুই জানি না। তাই আমি চীনা ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
২০১০ সালে দুবাইয়ে চীনা ভাষার গাইড হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি করার সময় চীনে যাওয়ার সুযোগ পাই। চীন-আরব প্রথম অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ফোরামে অনুবাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছে মাত্র ৩ মাসের জন্য।
"চীনে আসার আগে নিং সিয়া সম্পর্কে কিছুই জানতাম না, এমনকি এর নামও শুনিনি। কিন্তু এখানে আসার পর আমার মনে নিং সিয়া গভীর ছাপ ফেলেছে। এখানে কাজের অনেক সুযোগ আছে। শুধু অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেই নয়, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও নিং সিয়ার বিপুল উন্নয়নের সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয়।"
২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে, সাঈদ নিং সিয়ার দুই ছেলের সঙ্গে যৌথভাবে একটি কোম্পানি খুলেছে। তাদের কোম্পানির প্রধান ব্যবসা হলো, চীন-আরবি ভাষা অনুবাদ ও বই-প্রকাশনা এবং আরবি ভাষা শিক্ষা দেওয়া। তিনি বলেন, নিং সিয়া তার জীবনে পরিবর্তন এনেছে।
"নিং সিয়া, বিশেষ করে এর দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জায়গায় আমি যেন আরবে ফিরে যাওয়ার স্বাদ পাই। এখানে মানুষের অভ্যাস, ধর্মীয় অনুষ্ঠান আরবের মতই। একমাত্র পার্থক্য হলো আরবি ভাষা জানে না তারা।"
নিং সিয়ার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে মিশে যান সাঈদ। এ অঞ্চলকে তার নিজের বাড়ি বলে মনে হয়। প্রথম বিদেশি মানুষ হিসেবে নিং সিয়ায় গাড়ি কিনেছেন তিনি।
"এখন যদি আমি 'বাড়িতে ফিরতে চাই'বলি, আমার বন্ধুরা জানেন যে, আমি নিং সিয়ায় ফিরবো। এখানে প্রতিদিন আমি একজন খুশি ও সুখী মানুষ। কখনো কখনো আমার পরিবারের সদস্যরা আমাকে জিজ্ঞাস করে, কখন আমি আরবে ফিরবো, আমিও জানি না---এটা আমার উত্তর।"
সাঈদ চীন সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। বিশেষ করে চীনের সংস্কৃতি সম্পর্কে তার আগ্রহ অনেক।
"সাংস্কৃতিক উন্নয়ন হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। যদি দু'দেশের জনগণের মধ্যে সমঝোতা হয়, তাহলে সহযোগিতা আরও সুষ্ঠু হবে, অনেকটা বন্ধুদের বিনিময়ের মতো, তাই না?"
দৈনন্দিন জীবনে ম্যাসেজ, ইমেইলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনা ভাষা ব্যবহার করেন সাঈদ। ৪ বছর চীনা ভাষা শেখার পর তার চীনা ভাষা স্থানীয় মানুষদের মতো ভালো লাগে।
যদি মন দিয়ে চেষ্টা করো, তাহলে অবশ্যই ভালো ফল হবে। বর্তমানে আমাদের কোম্পানির ব্যবসা খুবই ভালো। কিন্তু প্রথমে কত টাকা উপার্জন করতে পারবো, তা আমরা বুঝতে পারিনি। প্রতিটি বই ছিল আমার সন্তানের মতো। আমি আশা করি, অন্য মানুষ সে বইটি পড়ে আমার মতো বইটিকে ভালোবাসতে পারবে।
"আমি আশা করি ধীরে ধীরে আমাদের অল্প অল্প প্রচেষ্টায় দু'দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় আরো সমৃদ্ধ হবে।"
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক কোনো কিছু জানতে বা আলোচনা করতে চান, তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ই-মেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমৎকার পরামর্শ আশা করছি। আর আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, আমার ইমেইল ঠিকানা হলো, hawaiicoffee@163.com।
চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। অনুষ্ঠান শোনার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহে একই দিন, একই সময় আপনাদের সঙ্গে আবারো কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়ান (জিনিয়া/তৌহিদ)